১৪ বছরেই ক্রিকেট দুনিয়ার হৃদপিণ্ডে Vaibhav Suryavanshi : রাজস্থানের বিস্ময়! What an innings ?

১৪ বছর বয়সেই আইপিএল কাঁপিয়ে দিল এক কিশোর। ৩৫ বলে শতরান করে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে ইতিহাস গড়লেন Vaibhav Suryavanshi — ভারতের ক্রিকেটে এক নতুন সূর্যোদয়।

একটি গ্রাম থেকে শুরু — ক্রিকেটে পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন-Vaibhav Suryavanshi
বিহারের সমস্তিপুর জেলার এক ছোট্ট গ্রাম থেকে উঠে আসা এই কিশোরের গল্প যেন এক সেলুলয়েডের সিনেমা। বাবা সঞ্জীব সূর্যবংশী, পেশায় কৃষক, নিজের স্বপ্নপূরণ না করতে পারার দুঃখ ভুলে ছেলেকে গড়তে শুরু করেন। বাড়ির পেছনের সামান্য জায়গা পরিষ্কার করে তৈরি হয় প্রথম প্র্যাকটিস পিচ। সঞ্জীব নিজের কাজ বন্ধ করে দেন পুরোপুরি, শুধুই ছেলেকে সময় দেবার জন্য। সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তোলেন বৈভবের দাদা।
ছোট থেকেই নজরকাড়া প্রতিভা
মাত্র ৯ বছর বয়সে ভর্তি হন সমস্তিপুর ক্রিকেট একাডেমিতে। বিজয় মার্চেন্ট ট্রফির ট্রায়ালে সুযোগ পেলেও বয়সের কারণে দলে রাখা হয়নি — কিন্তু ভাগ্য ঠিকই নিজের পথ খুঁজে নেয়। ট্রায়ালেই উপস্থিত ছিলেন রঞ্জি ক্রিকেটার মনীষ ওঝা। প্রতিভা চিনতে ভুল করেননি তিনি, এবং দায়িত্ব নেন কোচিংয়ের। ওটাই ছিল বৈভবের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের এক বড় মোড়।
১২ বছরেই অনূর্ধ্ব-১৯, ১৩ বছরেই সেঞ্চুরি!
মাত্র ১২ বছর বয়সেই বিহারের হয়ে ভিনু মানকড় ট্রফিতে অভিষেক। ৫ ম্যাচে ৪০০-র বেশি রান করে তাক লাগিয়ে দেন নির্বাচকদের। এরপর অনূর্ধ্ব-১৯ ‘বি’ দল এবং মূল দলের হয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্স। চেন্নাইয়ে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যুব টেস্টে ৫৮ বলে শতরান — ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম!

আইপিএল নিলামে হাইপ, রেকর্ড গড়ার দিন-Vaibhav Suryavanshi
আইপিএল ২০২5-এর নিলামে সবচেয়ে কমবয়সী খেলোয়াড় হিসেবে উঠে আসেন আলোচনায়। ভিত্তিমূল্য ৩০ লক্ষ হলেও, শেষ পর্যন্ত রাজস্থান রয়্যালস তাঁকে দলে নেয় ১ কোটি ১০ লক্ষ রুপিতে। কোচ রাহুল দ্রাবিড় বলেছিলেন, “প্রক্রিয়া মেনে খেলানো হবে তাঁকে।” কেউ ভাবেনি তৃতীয় ম্যাচেই ইতিহাস গড়বেন!
গুজরাটের বিপক্ষে ঝড় তুললেন — ৩৫ বলে শতরান, ১১টি ছক্কা, ৭টি চারে ১০১ রান! শার্দুল ঠাকুরের প্রথম বলেই ছক্কা — সেটাই তাঁর আইপিএল অভিষেক। ক্রিকেটবিশ্ব স্তব্ধ। ইনস্টাগ্রামে তাঁর হাইলাইটস শেয়ার করে ব্রায়ান লারা নিজেই লিখলেন, “Absolutely filled my heart!”
ব্রায়ান লারার ভক্ত, শচীন নয় আদর্শ
বৈভবের ক্রিকেট আইকন ব্রায়ান লারা। তাঁর ৪০০ রানের ইনিংস অসংখ্যবার দেখেছেন বৈভব। লারার আগ্রাসন, অধিনায়কত্বের মানসিকতা এবং হার না মানা মনোভাবই তাঁর অনুপ্রেরণা।
খাবার-দাবারে কড়া নিয়ন্ত্রণ, ত্যাগই সফলতার মূল-Vaibhav Suryavanshi
তরুণ বয়স হলেও খাবারে প্রচুর নিয়ন্ত্রণ — মাটন, চিকেন, পিৎজা সব বাদ। মনীষ ওঝা জানিয়েছেন, বৈভব এই বয়সেই খাদ্যাভ্যাসে কড়া নিয়ন্ত্রণ রাখে ক্রিকেটের স্বার্থে।
বয়স বিতর্ক? বাবা বলছেন — “আবারও পরীক্ষা দিন”
বয়স নিয়ে কিছু বিতর্ক থাকলেও, বৈভব ও তাঁর পরিবার আত্মবিশ্বাসী। বৈভব বিসিসিআই অনুমোদিত বোন টেস্ট দিয়েছেন, বাবা জানিয়েছেন প্রয়োজনে আবারও পরীক্ষা দিতে রাজি। জন্ম তারিখ — ২৭ মার্চ ২০১১।
স্কুলছাত্র থেকে কোটিপতি ক্রিকেটার — জীবনের মোড়-Vaibhav Suryavanshi
বর্তমানে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে বৈভব, তাজপুরের মুক্তেশ্বর সিনহা মডেস্টি স্কুলে। আইপিএল ব্যস্ততায় কিছুটা ছেদ পড়লেও পড়াশোনা ছাড়েনি সে। রাজস্থান রয়্যালসের সঙ্গে তিন বছরের চুক্তিতে প্রতি বছর আয় ১ কোটি ১০ লক্ষ রুপি। প্রতিটি ম্যাচে ম্যাচ ফি ৭.৫ লক্ষ রুপি। উপরন্তু, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের তরফে ১০ লক্ষ রুপি পুরস্কার এবং রাজস্থান মালিকের পক্ষ থেকে উপহার এক মার্সিডিজ বেঞ্জ।
শেষ কথা: ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ক্রিকেট দুনিয়া
বৈভব সূর্যবংশী এখন শুধুই একটি নাম নয়, এটি এক প্রতীক — প্রতিভা, পরিশ্রম এবং স্বপ্নপূরণের। ক্রিকেট বিশ্ব তাকিয়ে আছে তার দিকেই। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা — ভারত কি পেল তার পরবর্তী আইকন?